বাংলার সকাল ডেস্ক : বিশ্ব এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, এই অস্থির সময় বিশ্বব্যাপী আস্থার সংকট তৈরি করছে, যা রাষ্ট্র, সমাজ এবং ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যকার বিশ্বাসকে দুর্বল করে দিচ্ছে।জাপানের টোকিওতে ইম্পেরিয়াল হোটেলে অনুষ্ঠিত ৩০তম নিক্কেই ফোরাম: ফিউচার অব এশিয়া-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে মূল প্রবন্ধে তিনি এ কথা বলেন। “এশিয়ান চ্যালেঞ্জেস ইন আ টার্বুলেন্ট ওয়ার্ল্ড” শীর্ষক প্রবন্ধে ইউনূস বলেন, “আমরা এমন এক সময় অতিক্রম করছি, যেখানে অস্থিরতা দিন দিন বাড়ছে, শান্তি ভঙ্গুর হয়ে উঠছে, উত্তেজনা বাড়ছে, আর সহযোগিতার নিশ্চয়তা দুর্লভ হয়ে পড়ছে।”
আকাশ ভেজাতে নিম্নচাপ পরিণত গভীর নিম্নচাপে
তিনি ইউক্রেইন, গাজা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নানা সংকট, মিয়ানমারের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ ও সাম্প্রতিক ভূমিকম্প, এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “আজও বিশ্ব যুদ্ধবাজিতে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে, অথচ লক্ষাধিক মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।”যুদ্ধবিরতির জন্য ভারত ও পাকিস্তানের নেতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে ইউনূস দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি ও স্থিতিশীলতার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বাড়ার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, প্রযুক্তি যেমন সম্ভাবনা তৈরি করেছে, তেমনি তা নৈতিক সংকটও তৈরি করছে। বাণিজ্য বাধা, বৈষম্য এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার উদাহরণ হিসেবে তিনি বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার সাম্প্রতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের প্রসঙ্গে ইউনূস বলেন, “গত বছর ছাত্রদের নেতৃত্বে গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে একটি রূপান্তরমূলক পরিবর্তন এসেছে, যার ধারাবাহিকতায় আমি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমাদের লক্ষ্য ন্যায়বিচার, সাম্য ও মর্যাদার ভিত্তিতে একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করা।”বাংলাদেশের শান্তিরক্ষায় অংশগ্রহণ এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়ার বিষয়েও তিনি আলোকপাত করেন। এশিয়াকে একই সঙ্গে সংকট ও সম্ভাবনার কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, “আমাদের সম্মিলিত শক্তির মাধ্যমে শান্তির, সংলাপের এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথ তৈরি করা সম্ভব।”
তিনি তাঁর ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্বের কথা তুলে ধরে বলেন—শূন্য দারিদ্র্য, শূন্য বেকারত্ব ও শূন্য কার্বন নিঃসরণ—এই লক্ষ্য অর্জনে সরকার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যক্তির সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।“নতুন ধরনের অর্থনীতি দরকার, যা প্রতিযোগিতার চেয়ে সহানুভূতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে। এখানেই সামাজিক ব্যবসার ভূমিকা, যা শুধু লাভ নয়, সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যেও কাজ করে,” বলেন ইউনূস।নিক্কেই ফোরামকে তিনি “আশার প্ল্যাটফর্ম” হিসেবে অভিহিত করে বলেন, “এশিয়ার ভবিষ্যৎ কেবল অর্থনীতি বা ভূরাজনীতির বিষয় নয়, এটি মানুষের, চিন্তার এবং সাহসের বিষয়। আমরা যেন ভয় নয়, সম্ভাবনাকে পথপ্রদর্শক করি।”
অধ্যাপক ইউনূস তাঁর বক্তব্য শেষ করেন এই আশাবাদ দিয়ে: “এশিয়ার ভবিষ্যৎ এখনো লেখা হয়নি। আসুন, আমরা একসঙ্গে সেটা লিখি।”