বাংলার সকাল ডেস্ক : এক ফোঁটা পানি বদলে দিতে পারে বিশ্বাসের সংজ্ঞা। মক্কার বুকের ঠিক মাঝখানে, পবিত্র কাবা শরিফের কাছেই এক অলৌকিক কূপ—জমজম। হজ বা ওমরাহ করতে গেলে কেউই এ পানি না খেয়ে ফেরেন না। অনেকেই বোতলে করে স্বজনদের জন্য নিয়ে আসেন দেশে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কেন এই পানিকে এত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়?জমজম কূপ শুধু একটি পানির উৎস নয়, বরং মুসলমানদের কাছে এটি এক ঈশ্বরীয় নিদর্শন। ইসলামের ইতিহাস বলছে, বহু বছর আগে নবী ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর আদেশে তার স্ত্রী হাজেরা ও শিশু পুত্র ইসমাইলকে নির্জন মক্কার মরুভূমিতে রেখে যান। শিশুর তৃষ্ণায় ছটফটানি দেখে হাজেরা দুই পাহাড়—সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাতবার দৌড়ান। ঠিক তখনই আল্লাহর হুকুমে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.) মাটি খুঁড়ে বের করেন এক আশ্চর্য ঝরনা—যার পানি আজও শেষ হয়নি, শুকায়নি। সেই অলৌকিক ঝরনাই আজকের জমজম কূপ।
তবে শুধু ধর্মীয় তাৎপর্যই নয়, বিজ্ঞানের চোখেও জমজম কূপ একটি বিস্ময়। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, জমজমের পানিতে থাকা খনিজ উপাদান যেমন—ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফেট শরীরের জন্য উপকারী। এই পানির পিএইচ মাত্রাও ৭.৯ থেকে ৮-এর মধ্যে, যা এটিকে হালকা ক্ষারীয় করে তোলে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, জমজমের পানি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করলেও এতে ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক জন্মায় না, যা সাধারণ পানির জন্য অস্বাভাবিক। এটি নিজস্ব এক ধরনের জীবাণুনাশক উপাদান বহন করে বলে ধারণা করা হয়।
এছাড়া, জমজম কূপ নিয়ে একাধিক বৈজ্ঞানিক ও ভূতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে, এটি একটি ভূগর্ভস্থ প্রবাহমান পানির উৎস, যার গভীরতা প্রায় ৩০ মিটার। প্রতিদিন লাখো মানুষ জমজমের পানি ব্যবহার করলেও এটি কখনো শুকায় না। সৌদি সরকার এ পানি বিশুদ্ধভাবে সংরক্ষণ ও বিতরণের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে।জমজমের পানি কেবল শারীরিক সুস্থতার জন্য নয়, আত্মিক প্রশান্তির প্রতীকও বটে। মুসলমানরা বিশ্বাস করেন, নিয়ত করে এই পানি পান করলে তা শেফা বা আরোগ্য বয়ে আনে। কেউ রোগমুক্তির নিয়ত করে, কেউ প্রার্থনায় পূর্ণতা চায়। এমনকি মৃত্যুর সময় অনেক মুসলমানের শেষ ইচ্ছাও থাকে জমজমের পানি পান করা।
জমজমের পানি ধর্ম, বিজ্ঞান ও ইতিহাস—তিন ক্ষেত্রেই এক অনন্য আশীর্বাদ। এর অলৌকিক উৎপত্তি, বৈজ্ঞানিক বিশুদ্ধতা এবং আধ্যাত্মিক তাৎপর্য একে মুসলিম সমাজে বিশাল মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। এটি কেবল একটি পানীয় নয়, বরং বিশ্বাস, ভক্তি ও ইতিহাসের এক নিরব সাক্ষী।