ষ্টাফ রিপোর্টার : ১৯৯২ সালের এই দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে আরএমপি। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সংস্থাটি রাজশাহী মহানগরবাসীর জানমালের নিরাপত্তা বিধান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও জনকল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে আসছে।আমার পুলিশ আমার দেশ, বৈষম্যহীন বাংলাদেশ’— এই স্লোগানকে সামনে রেখে বর্ণিল র্যালি ও নানা আয়োজনে উদ্যাপিত হলো রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) গৌরব ও সাফল্যের ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
আরএমপি’র ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আরএমপি সদর দপ্তরে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার জনাব মোহাম্মদ আবু সুফিয়ানের সভাপতিত্বে আরএমপি সদর দপ্তরে আয়োজিত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মো: জিল্লুর রহমান, প্রিন্সিপাল, বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, সারদা, রাজশাহী, খোন্দকার আজিম আহমেদ এনডিসি, কমিশনার, রাজশাহী বিভাগ, রাজশাহী, মোহাম্মদ শাহজাহান, পিপিএম (বার), পিএইচডি, রেঞ্জ ডিআইজি, রাজশাহী, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দিন, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জনাব মু. যহুর আলী, অধ্যক্ষ, রাজশাহী কলেজ, জনাব আফিয়া আখতার, জেলা প্রশাসক, রাজশাহী, জনাব ফারজানা ইসলাম, পুলিশ সুপার, রাজশাহী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ মাসুদ পারভেজ, পিএসসি, অধিনায়ক, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৫, রাজশাহী।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দপ্তর প্রাঙ্গণে বেলুন-ফেস্টুন উড্ডয়ন ও কবুতর অবমুক্তকরণের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এসময় উদ্বোধনী বক্তব্যে পুলিশ কমিশনার জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন। পরবর্তীতে দোয়া করা হয়। এরপর বর্ণাঢ্য র্যালি শুরু হয়। র্যালি শেষে আরএমপি সদর কনফারেন্স রুমে আলোচনা সভা শুরু হয়। এসময় সম্মানিত অতিথিবৃন্দ আরএমপি’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী’র কেক কাটেন।
পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, ৫ আগস্টের পর আসা বিভিন্ন অভিযোগ তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে যাচাই করে মামলা নেওয়া হয়েছে, যাতে সাধারণ নাগরিক হয়রানির শিকার না হন। প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্তে ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং চলছে। আরএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সমন্বয়ে গঠিত একটি টিম ফুটেজ ও তথ্য বিশ্লেষণ করছে। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা লক্ষ্যে সমস্যা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।পুলিশ কমিশনার বলেন এক ক্ষুদ্র পরিসর থেকে শুরু করে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) আজ নগরবাসীর আস্থার বিশাল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। ১৯৯২ সালের ১ জুলাই মাত্র ৪টি থানা ও ১১৩৫ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে, যা এখন ১২টি থানা ও ৩৪১৪ জন সদস্যের পরিবারে রূপ নিয়েছে। এই অর্জনে যাঁরা অবদান রেখেছেন, তাঁদের সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি।
তিনি আরও বলেন, জুলাই-আগস্ট পরবর্তীতে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো সংস্কার করে পুনরায় কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। হারানো অস্ত্র-গুলি উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। “জনবান্ধব, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক পুলিশি ব্যবস্থা গড়তে আমরা বদ্ধপরিকর। জনগণ যেন পুলিশকে বন্ধু মনে করে, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, রাজশাহী মহানগর পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাবে। অনুষ্ঠানে পুলিশ একাডেমি সারদার প্রিন্সিপাল ব্যারিস্টার মো: জিল্লুর রহমান বলেন, কোনো বিষয় বা ঘটনার প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য সরকারের কথা শোনার পাশাপাশি বিরোধী দলের গঠনমূলক পরামর্শের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।
পুলিশ বাহিনী অনেক ভালো কাজ করছে, তবে ইতিহাসের কিছু ঘটনায় (যেমন ৫ আগস্টের বিপ্লব) কিছু কর্মকর্তা রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ভুল পথে গিয়েছিল, যা পুরো বাহিনীর বদনাম ডেকে আনে। তবে এসব ঘটনায় ব্যক্তির দায় আছে, পুরো প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা উচিত নয়।পুলিশ রাজনৈতিক প্রভাব থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারে না, তবে যতটা সম্ভব রাজনৈতিক প্রভাব কমিয়ে এনে নিরপেক্ষভাবে কাজ করাই হবে পুলিশের বড় সফলতা।
আলোচনা সভায় উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা বলেন, একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে পুলিশের ভূমিকা অপরিসীম। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশকে আরও আন্তরিক হতে হবে। পুলিশকে সব ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে এবং কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। জনগণ যেন পুলিশকে নিজেদের বন্ধু ভাবতে পারে, সেই আস্থা অর্জন করতে হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন আরএমপি, রাজশাহী রেঞ্জ ও জেলা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ, রাজশাহীর অন্যান্য পুলিশ ইউনিটের কর্মকর্তাগণ ও সাংবাদিকবৃন্দ।