ষ্টাফ রিপোর্টার : বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগরকে রাজশাহী নগরীতে মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর সপুরা গোরস্থানে দাফন করা হয়। তবে গোরস্থানের পাশেই সপুরা ছয়ঘাটি মোড়ে তাদের নিজস্ব বাসার নির্মাণকাজ চলছে। সেই বাসার কাজ কয়েক মাসের ভেতর শেষ হলে এসে থাকার কথা ছিল তার। কিন্তু আর উঠা হলো না তৌকিরের।জানা গেছে, পাইলট তৌকিরের বংশীয় বাসা চাঁপাইনবাবগঞ্জে। তবে তার পরিবার রাজশাহী নগরীর উপশহর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করত। তৌকিরের বাবার নাম তোহরুল ইসলাম, তার মায়ের নাম সালেহা খাতুন। একমাত্র বোন বৃষ্টি মেডিকেলে কলেজে অধ্যায়নরত।
তৌকির রাজশাহীর গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপর পাবনা ক্যাডেট কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি ওই কলেজের ৩৪তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। ২০১৬ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে তৌকির যোগ দেন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে। তৌকিরের স্ত্রী ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকচারার। ঢাকায় থাকতেন তিনি। রাজশাহীতে ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়ে নিজের বাসায় উঠতে চেয়েছিলেন তারা।সরেজমিনে দেখা যায়, সপুরা গোরস্থানের অদূরে ছয়ঘাটি মোড়ে নিজস্ব জায়গায় তৌকিরের বাড়ির নির্মাণকাজ চলছে। দোতলা বিল্ডিং ইতোমধ্যে উঠেছে। মঙ্গলবার সকালেও মিস্ত্রীরা এসেছিলেন বিল্ডিংয়ের কাজের জন্য। তবে তৌকিরের সংবাদ তারা জানতেন না। সংবাদ শুনে তারা কাজ থেকে ফিরে যান।তৌকিরের চাচা মতিউর রহমান ও সাদিকুল ইসলাম বলেন, সপুরা ছয়ঘাটি মোড়ে বাসার কাজ চলছে। কয়েক মাস লাগত কাজ শেষ হতে। কিন্তু তার আগেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মারা গেল তৌকির। সেই বাসায় আর ওঠা হলো না তার।
সপুর ও উপশহর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, তৌকির খুবই ভদ্র ও মেধাবী ছিলেন। গত কুরবানি ঈদে স্ত্রীসহ এসেছিলেন তিনি। বিয়ের অনুষ্ঠান হয়েছিল গত ২১ ফেব্রুয়ারি। অনেক জাকজমক আয়োজন ছিল। নতুন বাসায় উঠার ইচ্ছা ছিল তার। ছুটিতে এসে বাসার কাজ দেখেও গেছিলেন তিনি। কিন্তু নিজস্ব বাসায় তার আর উঠা হলো না। পাইলট তৌকিরের মা সালেহা খাতুন মুঠোফোনে বলেন, এখন কথা বলতে পারছি না। আমরা ঢাকায় আছি। তাকে নিয়ে আমরা রাজশাহী আসব। আমার ছেলের জন্য দোয়া চাই।
রাজধানীর উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগরের মরদেহ হেলিকপ্টারে করে মঙ্গলবার দুপুর ২টায় ৫৫ মিনিটে রাজশাহী ক্যান্টনমেন্টে পৌঁছে। এরপর বেলা ৩টা ২৫ মিনিটে নগরীর উপশহরে তার বাসায় নেওয়া হয়।এ সময় বাসার সামনে স্বজন ও এলাকাবাসীর কান্নার রোল পড়ে। চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বেহুশ হয়ে পড়ে যান কয়েকজন স্বজন। প্রচণ্ড ভীড়ে মরদেহ না নামিয়ে রেলগেট মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয়।
বিমান বিধ্বস্তে প্রাণ হারানো ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগরের জানাজার নামাজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে নগরীর রেলগেটে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে তার জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে তাকে সেখানে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। এরপর বিকাল ৫টার দিকে নগরীর সপুরা গোরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়।জানাজা ও দাফনে তৌকিরের পরিবারের সদস্য, স্বজন, এলাকার শত শত সাধারণ জনগণ অংশ নেন। গোরস্থানের দুপাশে এলাকার নারীরা শেষবারের মতো তাকে দেখার আকুতি নিয়ে আসেন।
তৌকিরকে কবরে নামানোর আগে ও পরে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন ও ফায়ারিংসহ রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় নিয়ম মেনে শেষ বিদায় দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুজন সদস্য ও একজন স্বজন কবরে নামেন। এ সময় এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। গুমরে গুমরে কাঁদতে থাকেন উপস্থিত জনতা। দাফন শেষে দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। তৌকিরের মৃত্যুতে পুরো রাজশাহীজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।