বাংলার সকাল ডেস্ক : উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় সারা দেশজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৩ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৬৫ জন, যাদের অনেকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই মর্মান্তিক ঘটনায় গোটা জাতি যখন শোকাহত, ঠিক তখনই একটি হৃদয়বিদারক সামাজিক ঘটনার চিত্র নাড়িয়ে দিয়েছে অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীসহ লাখো মানুষের হৃদয়।
‘এনএসইউ ফ্যাকাল্টি কোর্স’ নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে একজন ব্যক্তি একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তুলে ধরেন তার আপন ভাইয়ের মৃত্যুর করুণ গল্প।পোস্টে তিনি লেখেন, বিমান দুর্ঘটনায় দগ্ধ ভাইকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় আশপাশের মানুষের ভিড় ও উদাসীন আচরণ ছিল প্রাণ বাঁচাতে না পারার অন্যতম কারণ। শত শত মানুষ শুধু দাঁড়িয়ে ভিডিও করছিল, কেউ এগিয়ে আসেনি সাহায্যের জন্য। এমনকি ভাইয়ের প্রাণ বাঁচাতে পানির টাকা ও রিকশাভাড়ার জন্য তাকে নিজের হাতঘড়িও বিক্রি করতে হয়।এই স্ট্যাটাস সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তা চোখ এড়ায়নি দেশের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীর। ঘটনাটি তাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। তিনি স্ট্যাটাসটির একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করে নিজ ফেসবুক প্রোফাইলে ক্ষোভ ঝাড়েন দেশের নাগরিক আচরণ ও মানসিকতা নিয়ে।
পোস্টে মেহজাবীন লেখেন, ‘আমরা কতটা অমানবিক হয়ে গেছি! দেশে অ্যাম্বুল্যান্স চলাচলের জন্য কোনো আলাদা লেন নেই, সামান্য কিছু হলেই রাস্তাজুড়ে জ্যাম, আর একটু বৃষ্টি হলেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট। যেই সময়টাতে সবার উচিত রাস্তাটি ফাঁকা করে দিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সকে অগ্রাধিকার দেওয়া, সেই সময় মানুষ ভিড় করে দাঁড়িয়ে থাকে ভিডিও করার জন্য, কনটেন্ট বানানোর লোভে।’তিনি আরও বলেন, ‘এমন এক সমাজে আমরা বাস করছি, যেখানে সাধারণ বুদ্ধির এতটাই অভাব যে, বিপদের সময় সাহায্যের চেয়ে শোরগোলটাই বড় হয়ে দাঁড়ায়। কিভাবে পারে এরা পানির দাম, গাড়ির ভাড়া, সব কিছু এভাবে বাড়িয়ে দিতে? রাতে এরা ঘুমোয় কিভাবে? আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেদের চোখে চোখ রাখতে পারে?’মেহজাবীনের এই মানবিক বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই তার বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে মন্তব্য করেন, ‘আমরা লজ্জিত, কারণ আমরা বাংলাদেশি নাগরিক।’ কেউ কেউ বলেন, ‘এই দেশে জীবনের কোনো মূল্য নেই, শুধু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আছে।’ কেউ আবার পুরো সিস্টেমের পরিবর্তনের দাবি জানান।
উল্লেখ্য, উত্তরার মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনার ধাক্কা শুধুই প্রাণহানির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—এটি দেশের নাগরিক সমাজ, মানবিক মূল্যবোধ ও সামাজিক আচরণের ওপরও বড় ধরনের প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।