মো: সিয়াম পাবনা প্রতিনিধি : চোখে মুখে বয়সের ছাপ স্পষ্ট। কণ্ঠস্বরেও বয়সের ভারে ক্লান্তি। তবুও পেটের ক্ষুধা থেমে থাকে না। তাই সকাল আটটা থেকে রাত দশটা পর্যন্ত রিকশা চালান পাবনা সদর উপজেলার ক্যালিকো মিল এলাকার বাসিন্দা রইজ উদ্দিন। বয়সের ভারে নুয়ে পড়লেও থেমে নেই তাঁর জীবন যুদ্ধ।
পাবনা শহরে এখন হাতে টানা রিকশা প্রায় বিলুপ্ত। অথচ এই বৃদ্ধ বয়সেও হাতে টানা রিকশা চালিয়ে দু’মুঠো ভাতের জোগান দেন রইজ উদ্দিন। গতকাল বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, এরশাদ সরকারের আমল থেকেই রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি। “পেটের দায়ে বাধ্য হয়েই আজও রিকশা চালাতে হয়,” কাঁপা কণ্ঠে এমনই অকপট স্বীকারোক্তি দেন তিনি।
জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত সয়ে এসেছেন তিনি। সংসার জীবনে দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জনক ছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত এক ছেলে ও এক মেয়েকে হারাতে হয়েছে। বর্তমানে তাঁর এক মেয়ে পাবনা শহরের সাধুপাড়ায় স্বামী-সন্তান নিয়ে থাকেন এবং এক ছেলে রংপুরে পরিবারের সঙ্গে বসবাস করেন। তবে তাঁদের কাছ থেকে কোনো সহায়তা পান না তিনি। ২০২১ সালে সহধর্মিণী বছিরন খাতুনের মৃত্যু তাঁকে একেবারে একা করে দিয়েছে। তারপর থেকে নিঃসঙ্গতাই তাঁর নিত্যসঙ্গী।
রইজ উদ্দিন জানান, প্রতিদিন সকালে রিকশা নিয়ে বের হলেও সবসময় ভাড়া মেলে না। বুধবার বৃষ্টিতে ভিজে সারাদিন রিকশা চালিয়ে উপার্জন হয়েছে মাত্র ৬০-৭০ টাকা। এই সামান্য আয় দিয়েই চালাতে হয় খাবার, ওষুধ আর বাকি প্রয়োজন।
দুঃখভারাক্রান্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, “এই বয়সে হাড়ভাঙা খাটুনি আর কষ্টের জীবন বড় অসহনীয়। সরকার বা সমাজের কেউ যদি একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিত, তবে হয়তো শান্তিতে শেষ বয়সটা কাটাতে পারতাম।”
রইজ উদ্দিনের এই করুণ জীবনচিত্র হৃদয় ছুঁয়ে যায়। সমাজ ও মানবতার খাতিরে এ ধরনের অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি।