DhakaSunday , 7 December 2025
  1. অপরাধ
  2. অর্থনীতি
  3. আন্তর্জাতিক
  4. ই-পেপার
  5. খেলাধুলা
  6. জাতীয়
  7. তথ্যপ্রযুক্তি
  8. ধর্ম
  9. ফিচার
  10. বিনোদন
  11. ব্যবসা-বাণিজ্য
  12. মহিলা অঙ্গন
  13. রাজনীতি
  14. রাজশাহী
  15. শিক্ষা
আজকের সর্বশেষ সবখবর

জাতিসংঘ একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন

Link Copied!

বাংলার সকাল ডেস্ক : জাতিসংঘ একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন। বিশ্বের সকল স্বাধীন রাষ্ট্র এর সদস্য। বিশ্বজুড়ে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়াই এর মূল লক্ষ্য। যদিও এটি মানবজাতির প্রথম আন্তর্জাতিক সংগঠন নয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতার পর ১৯১৯ সালে গঠিত হয় জাতিপুঞ্জ, তবে সংস্থাটির দুর্বলতা, বড় শক্তির রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও হিটলারের উগ্র জাতীয়তাবাদের ফলস্বরূপ মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়নি। যুদ্ধের শেষদিকে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণে মুহূর্তেই মৃত্যু হয় লাখো মানুষের, আর যারা বেঁচে যায় তাদের জীবনও দীর্ঘদিন ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে। বিশ্ব বিবেক বুঝে যায়—যুদ্ধ কোনোদিন শান্তি বয়ে আনে না, বরং মানবসভ্যতাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্স ও চীনের প্রতিনিধিরা নতুন একটি কার্যকর আন্তর্জাতিক সংস্থা গঠনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়, যার ধারাবাহিকতায় ২৪ অক্টোবর ১৯৪৫ জাতিসংঘ পূর্ণাঙ্গ সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রতিষ্ঠার সময় সদস্য ছিল ৫১টি, বর্তমানে সংখ্যা ১৯৩। জাতিসংঘের ছয়টি প্রধান শাখার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদ। যার উপর ন্যস্ত রয়েছে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার প্রধান দায়িত্ব। যুদ্ধ বন্ধ করা, শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানো, নিষেধাজ্ঞা জারি করা—সবই এ পরিষদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে হয়।
জাতিসংঘ সনদের ২৩ ধারায় নিরাপত্তা পরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫, এর মধ্যে ১০টি অস্থায়ী এবং ৫টি স্থায়ী। অস্থায়ী সদস্যরা সাধারণ পরিষদে নির্বাচনের মাধ্যমে দুই বছরের জন্য মনোনীত হয়। কিন্তু পাঁচ স্থায়ী সদস্য—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, ফ্রান্স ও চীন—যারা ‘সুপার–৫’ নামে পরিচিত, তাদের হাতে রয়েছে ভয়ংকর ক্ষমতা—ভেটো। একটি রাষ্ট্র ভেটো দিলেই প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়, এমনকি বাকি ১৪টি রাষ্ট্র সমর্থন করলেও। সনদের ২৭(৩) ধারায় বলা হয়েছে—গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হলে স্থায়ী পাঁচসদস্য রাষ্ট্রের সমর্থন বাধ্যতামূলক। এই ভেটো ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে দেশগুলো তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত থাকে। যার অসংখ্য উদাহরণ ছড়িয়ে রয়েছে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য হতে চাইলে চীন ভেটো দেয়। ফলে অধিকাংশ রাষ্ট্র সমর্থন করলেও বাংলাদেশ সদস্য হতে পারেনি। এটি ছিল ভেটোর অপব্যবহারের একটি স্পষ্ট উদাহরণ।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে স্থায়ী সদস্য দেশগুলো ভেটো পাওয়ারকে কাজে লাগিয়ে নিজ রাজনৈতিক স্বার্থ আদায় করার চেষ্টা করেছে।
বর্তমান বিশ্বে নিরাপত্তা পরিষদের অকার্যকারিতা আরও প্রকটভাবে চোখে পড়ে। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যাকায় হামাস–ইসরায়েল সংঘাতে ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত হাজারো মানুষ নিহত হয়েছে, বাস্তুচ্যুত হয়েছে লক্ষাধিক শিশু। অধিকাংশ দেশ যুদ্ধবিরতির পক্ষে ভোট দিলেও যুক্তরাষ্ট্রের ইসরাইলের পক্ষে বারবার ভেটো প্রয়োগে বড় কোনো সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয়ের সামনে নিরাপত্তা পরিষদ নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এমন অবস্থা কি কোনো শান্তিরক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য গ্রহণযোগ্য? ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধেও একই চিত্র। এখানে আক্রমণকারী রাষ্ট্র রাশিয়া নিজেই নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। ফলে যুদ্ধ থামানোর উদ্দেশ্যে জাতিসংঘে যেসব প্রস্তাব আনা হয়, সেগুলোতে রাশিয়ার ভেটো প্রদান করায়, আর সাফল্যের মুখ দেখে না। একটি দেশ একইসাথে আগ্রাসী এবং বিচারকের ভূমিকায়—এ এক নির্মম বৈপরীত্য। সুদানে ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে, হাজারো মানুষ নিহত। তবু স্থায়ী সদস্যদের ভূ-রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের কারণে এখন পর্যন্ত বাস্তবসম্মত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। মিয়ানমারে সামরিক জান্তা সরকার কর্তৃক রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্টী নির্ধন ও দেশ ত্যাগে বাধ্য করা। জাতিসংঘের নিরাপাত্তা পরিষদে এখানেও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ।    ফলে গণহত্যা, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রয়েছে। সিরিয়া, কুর্দিস্তান, ইয়ামেন, কাশ্মীর, চেচনিয়া, জিনজিয়াং এং আফ্রিকায় জাতিগত দ্বন্দ্ব নিরসনে এখনো নিরাপাত্তা পরিষদ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এসব ঘটনা প্রমাণ করে—নিরাপত্তা পরিষদ আজ শান্তির প্রতিষ্ঠান নয়; বরং ভেটো-নির্ভর অচলাবস্থার কারণে অশান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। যদিও বিশ্বের বিভিন্ন সংকট নিরসনে নিরাপাত্তা পরিষদে অগ্রাণী ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে কসাভো সংকট, ইরাক-কুয়েত যুদ্ধ, আফ্রিকায় শান্তি মিশন পরিচালনায় নিরাপাত্তা পরিষদের কর্তৃত্বের পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তা যথেষ্ট নয়।
এ অবস্থায় বিশ্বজুড়ে নিরাপত্তা পরিষদের কাঠামো পুনর্গঠনের দাবি জোরালো হচ্ছে। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় ভারত, জাপান ও জার্মানি স্থায়ী সদস্য হওয়ার স্পষ্ট যোগ্যতা রাখে। ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র, চতুর্থ সামরিক শক্তি, দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি। জাপান বিশ্বের তৃতীয় অর্থনৈতিক শক্তি এবং শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যতম বড় অবদানকারী। অন্যদিকে জার্মানি ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতি। এ ছাড়া ব্রাজিল লাতিন আমেরিকার আঞ্চলিক পরাশক্তি; দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া ও মিশর আফ্রিকার প্রতিনিধিত্বের জন্য যোগ্য। ইন্দোনেশিয়া, ইরান, তুরস্ক ও সৌদি আরবও আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশ্ব রাজনীতির নতুন বাস্তবতা বিবেচনা করলে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য বৃদ্ধি আজ সময়ের দাবি।
নিরাপাত্তা পরিষদর অচল অবস্থা নিরসনে বাস্তবমুখী হতে পারে, ভেটো ক্ষমতা সীমিত করা জরুরি। গণহত্যা, মানবিক বিপর্যয়, যুদ্ধবিরতি—এসব বিষয়ে ভেটো নিষিদ্ধ করা উচিত। দ্বিতীয়ত, ভেটো প্রয়োগ করলে রাষ্ট্রকে বাধ্যতামূলকভাবে যুক্তিসহ ব্যাখ্যা প্রকাশ করতে হবে। তৃতীয়ত, একক ভেটোর পরিবর্তে ‘আংশিক ভেটো’ পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে—অর্থাৎ কোনো প্রস্তাব বাতিল করতে হলে অন্তত দুই বা তিন স্থায়ী সদস্যকে যৌথভাবে ভেটো দিতে হবে। চতুর্থত, স্থায়ী সদস্য বৃদ্ধি করে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করা যেতে পারে। পঞ্চমত, শান্তিরক্ষা বাহিনীকে আরও স্বাধীনতা দেওয়া উচিত, যাতে মানবিক বিপর্যয়ের সময়ে মহাসচিব জরুরি ম্যান্ডেট দিতে পারেন। সর্বশেষ, আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করলে বা আগ্রাসী আচরণ করলে স্থায়ী সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত করার বিধানও বিবেচনা করা প্রয়োজন।
সবশেষে বলতেই হয়—জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আজ শান্তির বার্তা নয়, বরং বহু ক্ষেত্রে অশান্তির দায় বইছে। গাজা, ইউক্রেন, সুদান, মিয়ানমার—প্রতিটি সংকটেই পরিষদের অক্ষমতা প্রমাণ করেছে যে ১৯৪৫ সালের কাঠামো দিয়ে ২০২৫ সালের জটিল বিশ্ব রাজনীতি সামাল দেওয়া সম্ভব নয়। বিশ্বের শক্তির মানচিত্র বদলে গেছে, কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের কাঠামো থমকে আছে। ভেটো-নির্ভর এই একনায়কতান্ত্রিক ব্যবস্থার সংস্কার ছাড়া আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। যদি পরিবর্তন না আসে, তবে ভেটোর ছায়ায় রূপক বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠাতা।
লেখক: মো: সবুজ মিয়া
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
সাংগঠনিক সম্পাদক,
বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
যোগাযোগ: mdsobujahmedjibon@gmail.com

কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।