ষ্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে বিএনপির এক নেতাকে ধরে নিয়ে গিয়ে সাজানো মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। তবিবুর রহমান সুমন নামের এই ব্যক্তি সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ তুলেছেন। তিনি রাজশাহী নগরের ২৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিব ছিলেন। তার বাড়ি নগরের পঞ্চবটি এলাকায়। গত ৮ জুলাই রাজশাহীর বাঘা পৌর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার সঙ্গে সনেট নামের আরেক ব্যক্তিকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তার বাড়িও রাজশাহী মহানগরে। পরদিন সুমনকে ২০ গ্রাম গাঁজা ও সনেটকে ১০০ পিস ইয়া বড়ি রাখার মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। গেল শুক্রবার জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান সুমন।
এরপর রোববার দুপুরে রাজশাহী সিটি প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি। লিখিত বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, তিনি আলুর ব্যবসা করেন। পাওনা টাকা আনতে ৮ জুলাই তিনি বাঘা যান। সেখানে এলাকার পরিচিত সনেটের সঙ্গে তার দেখা হয়। সনেট তাকে ডেকে দোকানে চা পান করান। ওই সময় বাঘা থানা পুলিশ গিয়ে তাকে আটক করে। পাশাপাশি তাকেও আটক করে থানায় নেওয়া হয়। তার কাছে কোন মাদকদ্রব্য ছিল না বলে দাবি করেন।
সুমন বলেন, ‘পুলিশ সনেটের কাছে ইয়াবা পেয়েছিল, এটা সত্য। সনেট মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে অন্তত ১৭টি মামলা আছে। কিন্তু আমার নামে কোন থানায় মামলা কিংবা অভিযোগ নেই। শুধু এলাকার ছেলে বলে ডাকলে আমি তার কাছে যাই। তখন পুলিশ আমাকেও নিয়ে যায়। থানায় যাওয়ার পর পুলিশ আমাকে বলে, এক লাখ টাকা দিলে আমাকে ছেড়ে দেবে। তখন আমি আমার রাজনৈতিক পরিচয় দিই। এ সময় আমাকে আরও বেইজ্জতি করা হয়। রাজনৈতিক পরিচয় পেয়ে পুলিশ টাকা নিতে পারেনি। আবার ছেড়ে দিলে সমস্যা হবে ভেবে তারা আমার কাছ থেকে ২০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার দেখায়।
জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের ভিডিও করার অভিযোগ তুলে সুমন বলেন, ‘টাকা না নিতে পেরে বেশি পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার দেখানোর ভয় দেখায় পুলিশ। তা না হলে আমার কাছে ২০০ টাকার গাঁজা পাওয়া গেছে বলে স্বীকারোক্তি দিতে বলে। বেশি মাদক উদ্ধার দেখালে আমি জামিন পাব না, তাই বাধ্য হয়ে ২০০ টাকার গাঁজা ছিল বলে আমি স্বীকারোক্তি দিয়েছি। জোর করে এই স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়েছে। সেটি ভিডিও করে রেখেছে পুলিশ।
সুমনকে মাদকসহ গ্রেপ্তার এবং আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানোর খবর জানাজানি হলে রাজশাহী মহানগর বিএনপি তাকে ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে বহিষ্কার করে। এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে সুমন বলেন, ‘আমি ভুক্তভোগী। আমি কোন অপরাধ করিনি। আমি মাদক সেবন করি না, ব্যবসাও করি না। যাচাই-বাছাই কিংবা আমার কথা না শুনেই আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এতে আমি সামাজিকভাবে আরও হেয়প্রতিপন্ন হয়েছি। দলের কাছে আমার দাবি, সুষ্ঠু তদন্ত করে আমার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হোক। পাশাপাশি যে পুলিশ সদস্যরা আমাকে এভাবে ফাঁসিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আমাকে এই সাজানো মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ারও দাবি জানাচ্ছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আ.ফ.ম আছাদুজ্জামান বলেন, ‘মামলা মিথ্যা না। সনেট তো অনেক মামলার আসামি। তার সঙ্গে সুমনকেও পাওয়া যায়। এর সাক্ষী আছে। এখন সংবাদ সম্মেলন যে কেউ করতেই পারে। দলীয়ভাবে হয়তো চাপের মুখে পড়ে তিনি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তাঁর অভিযোগ সঠিক নয়।