ষ্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী শিল্প মাধ্যম পুতুলনাট্যকে সংরক্ষণ ও নতুন প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় করতে নওহাটায় অনুষ্ঠিত হয়েছে দিনব্যাপী এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা। মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুর ১২টায় নওহাটা অফিস কক্ষে ‘বাঁচার আশা’ পুতুল নাট্যদলের আয়োজনে কর্মশালার উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে ইউএনও আরাফাত আমান আজিজ বলেন, “পুতুলনাট্য শুধু বিনোদন নয়, এটি সমাজ পরিবর্তনের কার্যকর মাধ্যম। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ সংরক্ষণসহ নানা বিষয় সহজভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পুতুলনাট্যের ভূমিকা অনন্য। আমাদের উচিত এই প্রাচীন শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা এবং তরুণ প্রজন্মকে এতে যুক্ত করা।” তিনি ‘বাঁচার আশা’ পুতুল নাট্যদলের প্রশংসা করে বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ ধরনের উদ্যোগে সর্বাত্মক সহায়তা দেওয়া হবে।কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের পরিচালক মো. মোস্তফা সরকার। তিনি হাতে-কলমে প্রশিক্ষণার্থীদের পুতুল নির্মাণ, নাট্যরচনা, চরিত্রায়ণ, মঞ্চ উপস্থাপন কৌশল এবং সঙ্গীত-বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারের ওপর প্রশিক্ষণ দেন।
মো. মোস্তফা সরকার বলেন,“পুতুলনাট্য শুধু একটি শিল্প নয়, এটি আমাদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির জীবন্ত দলিল। আজকের তরুণ প্রজন্ম যদি এই শিল্পের প্রতি আগ্রহী হয়, তাহলে গ্রামবাংলার হারিয়ে যাওয়া সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আবার ফিরে আসবে। আমরা চাই, পুতুলনাট্য শুধু মেলার মঞ্চে নয়, বরং সামাজিক সচেতনতার প্রতিটি প্রচারণায় ব্যবহৃত হোক।” তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই দলটি গ্রামীণ জনপদে ঘুরে ঘুরে মাদকবিরোধী প্রচারণা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং পরিবেশ রক্ষায় পুতুলনাট্যের মাধ্যমে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে।
আয়োজকরা জানান, ভবিষ্যতে উপজেলা পর্যায় ছাড়িয়ে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে এ ধরনের কর্মশালার আয়োজন করা হবে, যাতে নতুন প্রজন্ম আবারও পুতুলনাট্যের প্রতি আগ্রহী হয় এবং এই প্রাচীন শিল্প আবার গ্রামীণ জীবনে প্রাণ ফিরে পায়।অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুব্রত কুমার সরকার, উপজেলা বিআরডিবি কর্মকর্তা শামসুন্নাহার, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী নাজমুল ইসলাম এবং উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা কায়ছার আহমেদ। অতিথিরা পুতুলনাট্যের ইতিহাস, সামাজিক প্রভাব এবং বর্তমান প্রজন্মের আগ্রহ নিয়ে মতামত ব্যক্ত করেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুব্রত কুমার সরকার বলেন,“শৈশবে পুতুলনাচ দেখেছি, আজকে আবার সেই পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে গেল। এটি একটি বাস্তবধর্মী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যা প্রাচীন ঐতিহ্য সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।”দিনব্যাপী কর্মশালায় প্রায় অর্ধশত সাংস্কৃতিক কর্মী, পুতুল শিল্পী, অভিনেতা-অভিনেত্রী ও বাদ্যযন্ত্রশিল্পী অংশ নেন। অংশগ্রহণকারীরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে গল্প নির্বাচন, সংলাপ চর্চা, পুতুলের নড়াচড়ার কৌশল, মঞ্চসজ্জা এবং সঙ্গীত পরিবেশনার অনুশীলন করেন। দিনশেষে অংশগ্রহণকারীদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন অতিথিরা।